
জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (JWST) আমাদের মহাবিশ্ব সম্পর্কে নতুন এবং চমকপ্রদ তথ্য প্রদান করছে। সম্প্রতি, এটি একটি বিশাল ছায়াপথ (গ্যালাক্সি) আবিষ্কার করেছে যা মহাবিশ্বের প্রাচীন ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে পারে। এই সন্ধান মহাবিশ্বের গঠন ও বিবর্তন সম্পর্কে নতুন ধারণা দিচ্ছে। এবার জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ ব্যবহার করে ‘বিগ হুইল’ নামের বিশাল এক ছায়াপথের (গ্যালাক্সির) খোঁজ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীদের অনুমান, সর্পিল ছায়াপথটি বিগ ব্যাং বিস্ফোরণের প্রায় ২০০ কোটি বছর তৈরি হয়েছে। এই আবিষ্কার ছায়াপথের বিবর্তন ও অতীতের মহাজাগতিক ঘটনার প্রভাব বোঝার জন্য নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ কী?
জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (JWST) নাসা, ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ESA), এবং কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সি (CSA)-এর যৌথ উদ্যোগে নির্মিত একটি শক্তিশালী মহাকাশ টেলিস্কোপ। এটি ২০২১ সালের ২৫ ডিসেম্বর সফলভাবে উৎক্ষেপণ করা হয় এবং মহাবিশ্বের গভীরে পর্যবেক্ষণের জন্য ইনফ্রারেড প্রযুক্তি ব্যবহার করে। নতুন গ্যালাক্সির অস্তিত্ব প্রমাণ করছে, একাধিক গ্যালাক্সির সংঘর্ষে বা দ্রুত একত্রিত হয়ে নতুন একটি বৃহৎ সর্পিল ছায়াপথ তৈরি হতে পারে। বিগ হুইল মহাকাশের এমন একটি অঞ্চলে অবস্থিত যেখানে বিভিন্ন গ্যালাক্সি একত্রিত থাকে।
বিজ্ঞানীদের দাবি, বিগ হুইল ছায়াপথটি প্রায় ৯৮ হাজার আলোকবর্ষজুড়ে প্রসারিত। এ বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ার সুইনবার্ন ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির বিজ্ঞানী থেমিয়া নানায়াক্কারা বলেন, ‘আমাদের নিজেদের ছায়াপথকে বিগ হুইলের চেয়ে বড় হতে আরও এক হাজার কোটি বছর বা তার বেশি সময় লাগবে। বিগ হুইল সর্বকালের সর্ববৃহৎ ছায়াপথ।
বিশাল ছায়াপথের সন্ধান
সম্প্রতি JWST একটি অতি বৃহৎ এবং পুরনো ছায়াপথ আবিষ্কার করেছে, যা মহাবিশ্বের জন্মের মাত্র কয়েক শ’ মিলিয়ন বছর পর গঠিত হয়েছিল।
আবিষ্কারের মূল তথ্য:
- নাম: CEERS-1019 (অস্থায়ী নাম)
- বয়স: আনুমানিক ১৩ বিলিয়ন বছর
- দূরত্ব: পৃথিবী থেকে প্রায় ১৩.২ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে
- বৈশিষ্ট্য: এটি আমাদের পরিচিত অন্যান্য ছায়াপথের তুলনায় বহুগুণ বড় এবং উজ্জ্বল
মহাবিশ্বের সাধারণ এলাকার তুলনায় সেখানকার এলাকা ১০ গুণ বেশি ঘন। বিজ্ঞানীরা জানান, এই ঘন পরিবেশ সম্ভবত ছায়াপথের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে।

এই আবিষ্কারের গুরুত্ব
JWST-এর এই আবিষ্কার আমাদের মহাবিশ্বের গঠন ও বিবর্তন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে।
গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবসমূহ:
- মহাবিশ্বের প্রথম ছায়াপথগুলোর গঠন: JWST এই ছায়াপথের রাসায়নিক বিশ্লেষণ করে দেখাচ্ছে যে এটি মহাবিশ্বের প্রথম দিককার তারকাসমূহের দ্বারা গঠিত হয়েছিল।
- ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জির ভূমিকা: মহাবিশ্বের প্রাথমিক বিকাশে ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জির ভূমিকা সম্পর্কে নতুন ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।
- নতুন মহাকাশ গবেষণার পথ উন্মোচন: JWST এর মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা আরও বহু দূরবর্তী ছায়াপথের সন্ধান করতে সক্ষম হচ্ছেন।
ভবিষ্যতের গবেষণা
JWST তার গবেষণার পরিধি আরও বিস্তৃত করছে এবং আগামী বছরগুলোতে আরও চমকপ্রদ আবিষ্কারের প্রত্যাশা করা হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বের জন্ম ও বিবর্তন সম্পর্কে আরও গভীর তথ্য সংগ্রহের জন্য JWST-এর ডেটা বিশ্লেষণ চালিয়ে যাচ্ছেন। জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ এখন পর্যন্ত নির্মিত সবচেয়ে শক্তিশালী টেলিস্কোপ। মহাকাশে থাকা টেলিস্কোপটি আমাদের মহাবিশ্বের প্রাচীনতম গঠন দেখার সুযোগ করে দিচ্ছে।