সেহরি ও ইফতারের দোয়া এবং রোজার নিয়ম
রোজার নিয়ম এবং সেহরি ও ইফতারের দোয়া
রমাদান মাস মহান আল্লাহ তা’আলা কর্তৃক দান করা সবথেকে বরকতপূর্ণ এবং মর্যাদাপূর্ণ মাস । এই মাসের প্রত্যেক মুহূর্তকে কাজে লাগানো উত্তম । কারণ ইসলাম রোজাদার কে দিয়েছে অনন্য মর্যাদা । রমজান মাস দোয়া কবুলের মাস । অন্য যেকোন মাসের থেকে এই মাসের ইবাদতের ফজিলত অনেক বেশি । রমজান মাসের প্রত্যেকটি ইবাদতের সওয়াব আল্লাহ কয়েকগুণ করে বাড়িয়ে দেন । রমজান মাসে যে রোজা রাখবে আল্লাহর পক্ষ থেকে তিনি অনেক পুরস্কার পাবেন যেমন তার জীবনের সকল গুনাহ মাফ হয়ে যাবে এবং জান্নাতে রাইয়ান নামক বিশেষ দরজা তার জন্য খুলে দেয়া হবে । এছাড়াও আরো অনেক ফজিলত রয়েছে রমজান মাসের রোজার ।
রমজান মাসকে দোয়া কবুল হওয়ার মাস বলা হয় । রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন – অবশ্যই মহান আল্লাহতালা রমজান মাসের প্রতিদিন এবং প্রতি রাতে তার অসংখ্য বান্দাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন এবং প্রত্যেক মুমিন বান্দার দোয়া কবুল করে নেন ।
রমজান মাসের রোজা রাখা প্রত্যেকটি মুসলমানের উপরে ফরজ আল্লাহতালা তার বান্দাদেরকে রোজা রাখার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন । রোজা রাখার জন্য ইফতার ও সেহরির দুয়ার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে ।
ফরজ রোজার নিয়ত:-
রোজার আরবি নিয়ত:- নাওয়াইতুয়ান আছুমা গাদাম, মিন শাহরি রমাদানাল মুবারকি ফারদাল্লাকা ইয়া আল্লাহু, ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আলিম ।
রোজার বাংলা নিয়ত:- হে আল্লাহ! আমি আগামীকালকে পবিত্র রমজান মাসে তোমার পক্ষ থেকে নির্ধারিত রোজা রাখার জন্য নিয়ত করলাম অতএব তুমি আমার পক্ষ থেকে কবুল করো । নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী ।
নিয়ত অর্থ হল কোন বিষয়ে ইচ্ছে পোষণ করা বা মত প্রকাশ বা প্রতিজ্ঞা করা । আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যে কোন কাজ শুরু করার আগে মনে মনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়াকে নিয়ত বলা হয় । তাই কেউ মুখে নিয়ত উচ্চারণ না করে মনে মনে নিয়ত পোষণ করলেও তার রোজা আদায় হয়ে যাবে ।
সেহরির ফজিলত:-
সেহরি না খেলে কি রোজা হবে?
রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন – আমাদের রোজা এবং ইহুদী-খ্রিস্টানদের রোজার মধ্যে তফাৎ হলো সেহরি খাওয়া । রোজার উদ্দেশ্যে ভোররাতে সুবেহ সাদিকের আগে আহার গ্রহণ করা কি সেহেরি বলা হয়। সেহরি করা একটি সুন্নত এবং এটি অত্যন্ত বরকতময় । এটি আমাদেরকে সকালে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করায় এবং তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় প্রদান করে । এসময় মহান আল্লাহতালা বরকত নাজিল করেন । রোজা রাখার জন্য সেহরি খাওয়া বাধ্যতামূলক নয় সেহরি না খেলেও রোজা আদায় হয়ে যাবে যেহেতু সেহরি খাওয়ার সুন্নত তাই অল্প খেলে সুন্নত আদায় হবে ।
সর্বনিম্ন এক ঢোক পানি খেলেও সেহরি আদায় হয়ে যাবে সেহরিতে একদম পেট ভরে খাওয়াটা জরুরী নয় শুধুমাত্র সুন্নত আদায়ের উদ্দেশ্যে আপনি চাইলে এক ঢোক পানি পান করেও সুন্নত বা সেহরি সম্পন্ন করতে পারেন ।
ইফতারের দোয়া:- ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু, ওয়া আ’লা রিযক্বিকা আফত্বারতু’ ।
অর্থ : ‘আল্লাহর নামে হে আল্লাহ! আমি রোজা রেখেছি তোমার জন্য এবং তুমি যা নিয়ামত দিয়েছো আমি তা দিয়েই ইফতার করেছি ।
রাসূলুল্লাহ (স.) অসংখ্য হাদিসে যথাসময় ইফতার করার জন্য তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘মানুষ ততদিন তারা কল্যাণ লাভ করবে, যতদিন ইফতারের সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেরি না করে ইফতার করবে ।
রমজান মাস মহান আল্লাহ তায়ালার একটি বড় নিয়ামত এই নিয়ামত সবার ভাগ্যে থাকে না । । বাকি সকল মাসের থেকে এই মাস উত্তম । এবং ইফতার সামনে নিয়ে বসে যে কোন দোয়া করলে মহান আল্লাহ তাআলা তা কবুল করে নেন ।
ইফতারের সময় যে যে কাজগুলো করতে হবে:- রোজার প্রথম শর্ত হচ্ছে সেহরি থেকে শুরু করে ইফতার পর্যন্ত পানাহ করা । কিন্তু সারাদিনের কাজের মাঝে অনেকে এমন অনেক কিছুই করে ফেলে যার মধ্য দিয়ে রোজা ভেঙে যায় ।
- ইফতারের সময় হওয়ার সাথে সাথে ইফতার করতে হবে।
- ইফতারের সময় অন্য কোন কাজে ব্যস্ত থাকা যাবে না।
- ইফতার শুরু করার আগে বেশি বেশি দোয়া এবং আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে হবে
- খেজুর দিয়ে ইফতার শুরু করা উত্তম।
মাগরিবের আজান দেয়ার সাথে সাথে ভারী খাবার না খেয়ে হালকা কিছু খেয়ে নামাজ আদায়ের পরে ভারী খাবার খাওয়াটাই উত্তম ।
কি কি কারণে রোজা ভেঙ্গে যেতে পারে:-
- শরীরের ভিতরে যেকোনো ধরনের ঔষধ প্রবেশ করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে ।
- স্ব-ইচ্ছায় বমি করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে ।
- ইসলাম ধর্ম যদি কেউ ত্যাগ করে তাহলে তার রোজা ভেঙে যাবে।
- মেয়েদের মাসিক কিংবা সন্তান প্রসবের পর রোজা ভেঙে যাবে ।
- বমি মুখে আসার পর তা আবার গিলে ফেললে রোজা ভেঙে যাবে ।
- শরীরে ইনজেকশন কিংবা সেলাইন লাগালে রোজা ভেঙে যাবে ।
- বৃষ্টির পানি মুখে পড়ার পর তা খেয়ে ফেললে রোজা ভেঙে যাবে ।
যেসব কারণে রোজা মাকরুহ হবে:-
- গরমের কারণে বারবার কুলি করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে ।
- ঝগড়া করলে রোজা মাকরুহ হয়ে যাবে ।
- অশ্লীল বাক্য উচ্চারণ করলে রোজা মাকরুহ হয়ে যাবে।
- রোজা থাকা অবস্থায় গীবত করলে রোজা মাকরুহ হয়ে যাবে ।
- যেকোনো মিথ্যা কথা বললে রোজা মাকরুহ হয়ে যাবে।
- টুথ পাউডার বা টুথপেস্ট দিয়ে ব্রাশ করলে রোজা মাকরুহ হয়ে যাবে ।
বেশি কথা বলা কিংবা বেশি ঘুমানো অথবা অনর্থক বিষয় নিয়ে বেশি চিন্তাভাবনা করা রোজাকে হালকা করতে পারে । কারণ এই কাজগুলো একজন রোজাদারকে ইবাদত করা থেকে বিরত রাখে
রোজার ফরজ তিনটি:-
- রোজার নিয়ত করা ।
- সেহরি থেকে ইফতার পর্যন্ত সব ধরনের পানাহার থেকে বিরত থাকা । ।
- সব ধরনের যৌন আচরণ থেকে বিরত থাকা ।
রোজার সুন্নত:-
- বেশি বেশি মহান আল্লাহ তায়ালার জিকির করা
- গরিব দুঃখীদের মাঝে দান সদকা বেশি করে করা
- আত্মীয় বন্ধন বজায় রাখা
- সকল মুসলমানের জন্য এবং নিজের জন্য দোয়া করা
- রাতে এবং দিনে দুইবারই কোরআন তেলাওয়াত করা
এছাড়াও আরো অনেক রোজার সুন্নত রয়েছে । রমজান মাসের রাতে এশার নামাজের পরে তারাবির নামাজ পড়াটাও একটি সুন্নত যে মুসলমান সারাদিন রোজা রাখার পরে এশার নামাজ পড়বে এবং তারপরে ইমামের সাথে তারাবির নামাজ আদায় করে মসজিদ থেকে বের হবে তার জন্য সারারাত নামাজ পড়ার সওয়াব দেয়া হবে । রমজান মাসে ওমরা হজ করাও সুন্নত । রমজানে একটি ওমরা আদায়ে হজের সমান সওয়াব রয়েছে ।
মহান আল্লাহ তালা উপরের ফরজ এবং সুন্নত গুলো প্রতিটি মুসলমানকে আদায় করার তৌফিক দান করুক এবং রমজানের রহমত বরকত এবং মাগফিরাত সকলকে দান করুক । প্রত্যেকটি মুসলমানকে 30 টি রোজা সঠিক এবং সুস্থভাবে পালন করার তৌফিক দান করুক । সকলকে ইতিকাফ করার তৌফিক দান করুক এবং পবিত্র লাইলাতুল কদরের রাত্রে সকলকে বেশি বেশি ইবাদত করার তৌফিক দান করুক । এবং আমাদের সকলকে আমাদের গুনাহ গুলো মাফ করে নেওয়ার জন্য তৌফিক দান করুক আমিন ।
এরকম আরো অনেক ইসলামিক পোস্ট পেতে প্রতিদিন আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন ।
আপনার মোবাইলের কারণে আপনিও বিপদে পড়বেন না তো?
রমজান সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য পেতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন
রমজানের ফরজ ওয়াজিব ও সুন্নত সমূহ